Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গবাদিপশুর রক্তপ্রস্রাব : কারণ ও প্রতিকার

আদ্র স্যাঁতসেঁতে জলাবদ্ধ এলাকায় গবাদিপশু রক্ত প্রস্রাব সমস্যায় আক্রান্ত হয়। স্যাঁতসেতে কর্দমাক্ত মাটি যেখানে পচা জৈব পদার্থ বেশি এবং মাটিতে অ্যালকালাইন সল্ট বিশেষ করে নাইট্রাইটের পরিমাণ বেশি থাকে এসব এলাকাতে গবাদি পশুর রক্ত প্রস্রাবের ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রস্রাবের সাথে লাল রক্ত কণিকা বা লাল রক্ত কণিকার রঙ অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতিকে হিমাচুরিয়া বলা যেতে পারে। রক্তে তিন প্রকার কণিকা থাকে। লাল রক্ত কণিকা (RBC), শ্বেতরক্ত কণিকা (WBC), ও অনুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট। হিমোগ্লোবিন লাল রক্ত কণিকার রঞ্জক পদার্থ। এটি লৌহঘটিত প্রোটিন। লাল রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি অক্সিজেন বহনের সহায়ক। প্রস্রাবে রক্ত বা রক্ত উপাদানের উপস্থিতির কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কিডনি ও মূত্রনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মূত্রতন্ত্রের নালিতে পাথর হওয়া, মূত্রথলের প্রদাহ, সংক্রামক রোগ ব্যাবেসিওসিসি, ল্যাপ্টোস্পাইরোসিস, ক্যাসিলারি হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া, পুষ্টিগত কারণের মধ্যে রয়েছে ফসফরাস ও কপারের অভাব ও মাত্রাতিরিক্ত পানি গ্রহণ, ওষুধজনিত কারণ এবং খাদ্যের রঙের কারণে।
প্রস্রাবের সাথে লাল রক্ত কণিকা বা প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি খালি চোখে দেখা যেতেও পারে নাও দেখা যেতে পারে।  অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে রক্ত কণিকার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রতি কিউবিক মিলিমিটার প্রস্রাবে ৩০০-৫০০ লোহিত রক্ত কণিকা বা ইরিথ্রোসাইট থাকলে প্রস্রাবের রঙ পিংক বা গোলাপি বর্ণের হবে। হেমাচুরিয়া বা রক্তমেহ
(Haematuria) নির্ণয়ে ইউরিন ডিপস্টিক (Urine Dipstick) টেস্ট করা যায়। প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে কমপক্ষে ১০টি ইরিথ্রোসাইট (RBC) থাকলে হেমাচুরিয়া বলা যায়। RBC এর সংখ্যা  ১০টির কম হলে ক্রিয়েটিন দেখতে হবে। অনুবীক্ষণ যন্ত্রে মূত্রের সেডিমেন্ট টেস্ট করলে লোহিত কণিকা ধরা পড়বে। কিডনিতে আঘাত, কিডনি প্রদাহ, বৃক্কনালি (Ureter) প্রদাহ, তীব্র মূত্রথলি প্রদাহ, মূত্রনালিতে পাথরি, ত্রুটিপূর্ণভাবে মূত্রথলিতে ক্যাথেটার প্রয়োগ, বিষক্রিয়া কপার, ফেনোল সালফা নেমাইড, মার্কারি ও আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়ার কারণ হলে প্রস্রাবে রক্ত আসতে পারে। হিমাচুরিয়ার ক্ষেত্রে প্রস্রাবের বর্ণ উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়।
প্রস্রাবের সাথে রক্ত মিশ্রিত থাকলে রক্তের উৎপত্তিস্থল কিডনি প্রস্রাব শেষে ফোটায় ফোটায় রক্ত আসলে উৎপত্তিস্থল মূত্রথলি এবং প্রস্রাবের শুরুতে রক্ত এলে রক্তপাতের উৎস মূত্রনালি বুঝতে হবে। প্রস্রাবের হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতিকে হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া বলে। এ অবস্থায়  প্রস্রাবের রঙ বাদামি বা কালচে বাদামি বর্ণের  হয়। মাংস পেশির পিগমেন্ট মায়োগ্লোবিন যখন প্রস্রাবে আসে তখন তাকে বলা হয় মায়োগ্লোবিন ইউরিয়া। অত্যাধিক হারে স্কেলিটাল মাংস পেশির কোষ বিনাশের ফলে মায়োগ্লোবিন ইউরিয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ও প্রস্রাবের বর্ণ বাদামি বা কালচে বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। প্রস্রাবে রক্ত ও মাংসপেশির পিগমেন্ট পেপার স্টিপস টেস্ট এবং ট্যাবলেট টেস্টের  সাহায্যে সহজেই নির্ণয়  করা যায়। হিমাচুরিয়া ও হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া প্রভেদমূলক ব্যবস্থা নিরূপণের জন্য প্রথমে একটি সেন্ট্রিফিউজ টিউবে প্রস্রাব নিয়ে ১ ঘণ্টা র‌্যাকে রেখে  দিলে বা ১০ মিনিট সেন্ট্রিফিউজ করলে হেমোগ্লোবিন ইউরিয়ার ক্ষেত্রে কোনো তলানি পড়বে না।  হেমাচুরিয়ার  ক্ষেত্রে লাল রঙের তলানি পড়বে।
হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া ও মায়োগ্লোবিন ইউরিয়ার মধ্যে প্রভেদমূলক ব্যবস্থা নিরূপণের জন্য ১০ মিলিলিটার প্রস্রাবের সাথে ১০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম সালফেট মিশিয়ে ঝাঁকালে যদি প্রস্রাবের বর্ণ না থাকে তবে  বোঝতে হবে হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া। রক্তে ফসফরাস এর মাত্রা কমে গেলে বা একই সাথে কপারের অভাবজনিত কারণে মহিষের হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া হতে পারে।  প্রস্রাবের বর্ণ গাঢ় বাদামি বা কালচে বাদামি বর্ণের। মহিষে রোগটি দুগ্ধাদানকালে দেখা যেতে পারে। পুষ্টিগত হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া চিকিৎসায় ৬০ গ্রাম সোডিয়াম হাইড্রোজেন অর্থোফসফেট ৫% ডেক্সেটোজ দ্রবণে দ্রবীভূত করে শিরায় ইনজেকশন করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর পর ইনজেকশন করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রস্রাবের স্বাভাবিক বর্ণ ফিরে আসে। এছাড়া ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে পশুকে খাওয়াতে হবে। শিরায় ১০% এসকরবিক এসিড ৫০ এমএল প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়।  উদ্ভিজ্জ খাদ্য খেয়ে রক্ত প্রস্রাব হলে এসকরবিক এসিড চিকিৎসায় উপকার পাওয়া যায়। ২-১০ মাস বয়সের বাছুরের অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে রক্ত প্রস্রাব হতে পারে। অল্প বয়সের বাছুরের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে প্রায়ই রক্ত দেখা যায়। বাকেটের সাহায্যে যেসব বাছুরকে দুধ খাওয়ানো হয় তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। বাকেটে দুধ বা  পানি যাই থাকুক না কেন বাছুর প্রচুর পরিমাণে তা গ্রহণ করে। বাছুরকে প্রয়োজনমতো পানি খেতে দিতে হবে। অধিক পারিমাণ পানি গ্রহণের কারণে কিডনিকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। বাকেটের মাধ্যমে দুধ বা পানি সরবরাহ করা হলে উন্মুক্ত পানির পাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  ননইউরো নেফ্রোলজিক্যাল উপাদন  যা প্রস্রাবের বর্ণ পরিবর্তন করে এর মধ্যে রয়েছে বিটরুট, রেড ক্যাবেজ, ব্লুবেরি, খাদ্যস্থ রঙ, ড্রাগ পিগমেন্ট মেন্ট্রোনিডাজল,নাইট্রোফিউরেনটোয়েন, ফেনিনডিওন এসব। মূত্রাশয়ের প্রদাহ বা মূত্রথলির প্রদাহ, পাইলোনেফ্রাইটিস-কিডনির সংক্রামণ এ রকম সমস্যার কারণে গাভীর রক্ত প্রস্রাব হতে পারে।  তবে পুরুষ প্রাণীতে এ সমস্যা তেমন একটা দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে পশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। বোভাইন সিস্টাইটিসের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ক্ষারধর্মী হবে। মূত্র সেন্ট্রিফিউজ করলে তলানি পড়বে। অনুবীক্ষণ যন্ত্রদ্বারা এ তলানি পরীক্ষা করলে লোহিত কণিকা ও এপিথেলিয়াল কোষ পাওয়া যাবে। প্রস্রাব ক্ষার ভাবাপন্ন হলে মূত্রবৎ তন্ত্রে জীবাণুনাশক যেমন হেক্সামিন, ম্যান্ডেলিক এসিড কাজ করে না। সুতরাং পশুর মূত্র লিটমাস কাগজ দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রস্রাব ক্ষারভাবাপন্ন হলে তা অম্লভাবাপন্ন করার জন্য অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ৫ গ্রাম করে দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে।
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড খাওয়ানোর পর প্রস্রাব অম্লভাবাপন্ন হলে গাভীকে ৫ গ্রাম হিসেবে হেক্সামিন দিনে দুইবার খাওয়াতে হবে। হেক্সামিন ইউরিনারি অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। আবার ইউরিনারি সিস্টেম তথা মূত্রতন্ত্রে নিম্নাংশের জীবাণু ঊর্ধ্বাংশে উঠে কিডনিতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে যে প্রদাহ হয় তাকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলে। স্ত্রী প্রাণীতে পাইলোনেফ্রাইটিসজনিত রক্ত প্রস্রাব হয়ে থাকে। পুরুষ প্রাণীতে তেমন একটা সমস্যা হয় না। তীব্র প্রকৃতির রোগে রক্তমেহ বা হেমাচুরিয়া, পুঁজমেহ
(Pyuria) কষ্টমূত্র (Dysuria) জ্বর, পুনঃপুন ও ব্যথাপূর্ণ প্রস্রাব হয়। পাইলোনেফ্রাইটিসের চিকিৎসায় অ্যাম্পিসিলিন, সালফোনেমাইডস, পেনিসিনিল ব্যবহার করা যায়। ৭ থেকে ১০ দিন পেনিসিলিন চিকিৎসা বেশ কার্যকর। প্রোনাপেন ৪০ প্রতিদিন ১ বার করে ৩-৫ দিন মাংসপেশিতে ইনজেকশন করতে হবে। তৃণভোজী পশুর মূত্র অ্যালকালাইন হয়। অ্যালাকালাইন মূত্র জীবাণুর বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী। অ্যালকালাইন মূত্রে ক্ষেত্রে সরাসরি অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা কার্যকরতে হয় না। সেজন্য মূত্রকে এসিডিফিকেশণ করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। প্রস্রাব অম্লভাবপন্ন করার জন্য অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বা সোডিয়াম এসিড ফসফেট ব্যবহার করা যেতে পারে। সোডিয়াম এসিড ফসফেট খাওয়ানোর প্রায় আধাঘণ্টা পরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাবেসিয়া (Babesia) গণভুক্ত আঠালিবাহিত বিভিন্ন প্রজাতি  দ্বারা সৃষ্ট পশুর রোগ ব্যাবেসিওসিস (Bbesiosis) নামে পরিচিত। এ রোগটি রেড ওয়াটার ফিভার নামে ও পরিচিত। এ রোগের কারণে ও রক্ত প্রস্রাব হতে পারে। জ্বর অ্যানেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া  এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। রোগের বাহক আঠালি নিয়ন্ত্রণ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডিপিং ও স্প্রের মাধ্যমে কীটনাশক পদার্থ প্রয়োগ করে আঠালি নিধন করা সম্ভব। ইমিডোকার্ব ডাই প্রোপায়োনেট ইমিজেল প্রতিকেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.২ মিলিগ্রাম হিসেবে ত্বকের  নিচে একবার ইনজেকশনই বেশ কার্যকর। গবাদি পশুতে রক্ত প্রস্রাবের ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগ (ব্যাবেসিও সিস), পুষ্টিগত কারণ (ফসফরাস ও কপারের ঘাটতি), ড্রাগ পিগমেন্ট বোভাইন সিস্টাইটিস, পাইলোনেফ্রাইটিস বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হবে। মূত্রথলির প্রদাহ, কিডনিতে ইনফেকশনজনিত কারণেই মূলত রক্ত প্রস্রাব হয়ে থাকে।

কৃষিবিদ মো. আকতার হোসেন*
* প্রশিক্ষক (প্রাণিসম্পদ), ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, চট্টগ্রাম ০১৯১৩২০১১০৭

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon